নির্মম নির্যাতন সম্মুখীন আমার বেঁচে ফেরা: ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান দয়াল
১৫ ই জুলাই, ২০২৪ আমি উপস্থিত থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে নিজ চোখে দেখেছি কীভাবে একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে দমন করতে ব্যবহৃত হয় ভয়, ভীতি আর সহিংসতা। হৃদয় কেঁপে উঠেছিল কিন্তু মন ছিল অবিচল, প্রতিবাদী।

আমি ব্যক্তিগতভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য আন্দোলনকে প্রথম দিন থেকেই মনেপ্রাণে সমর্থন করে আসছিলাম। শুধু সমর্থনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকিনি-আমি তাদের প্রতিটি কর্মসূচিতে সশরীরে উপস্থিত থেকে, একান্ত আপনজনের মতো পাশে দাঁড়িয়েছি। তীব্র রোদের তৃষ্ণায় যখন আমার ছাত্র ভাইদের ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছিল, আমি পৌঁছে দিয়েছি স্যালাইন আর ঠাণ্ডা পানি: ক্ষুধার্ত ছাত্রদের জন্য খাবারের প্যাকেট হাতে হাতে তুলে দিয়েছি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে।
১৬ ই জুলাই, ২০২৪: ১৫ ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার পরদিন অর্থাৎ ১৬ ই জুলাই, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, নয়াপল্টনে এক প্রতিবাদী মিছিলের আয়োজন করি। আমি নিজে আমার সহযোদ্ধা নেতাকর্মীদের নিয়ে সেই মিছিলে গর্জে উঠেছিলাম, বুকভরা ক্ষোভ আর চোখে প্রতিশোধের আগুন নিয়ে।
মিছিল শেষ হতেই খবর আসে-সাইন্সল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা নিরীহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলে পড়েছে। আর এক মুহূর্তও দেরি করিনি। ছুটে গিয়েছিলাম সেই রণক্ষেত্রে। আমি এবং ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের ভাইয়েরা শিক্ষার্থীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। বারবার আমাদের দিকে হাতবোমা ছোড়া হচ্ছিল, কিন্তু তবুও আমরা দমে যাইনি। পাঁচ মিনিটের ভেতরেই শিক্ষার্থীদের একসাথে জড়ো করে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যাই এবং তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও ঢাকা কলেজের ভেতরে ঠেলে পাঠিয়ে দিই।
সেই দিনে, আমাদের লড়াইয়ে সামনে ছিলেন বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ সাহসী ছাত্রনেতা মোঃ মিল্লাদ হোসেন, ঢাকা কলেজের সদস্য সচিব। আহবায়ক: পিয়াল হাসান, ইমন ইমু, শামীম হাওলাদার, আবির, মামুন, মিঠু, রেজাউল, মনির হোসেন, জিয়া, মাহি, জীবন, সাজ্জাদ জেমিন, তানভীর মাতুব্বর সহ আরো অনেকে, জুলাইয়ের কারা নির্যাতিত ছাত্র নেতা আহবায়ক সদস্য রিফাত হোসেন, গুলিবিদ্ধ ইমরান হোসেন, মাহবুব শান্তসহ অর্ধশতাধিক সাহসী সহযোদ্ধা। আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধে তারা ক্যাম্পাসে ঢুকে পরে আর সাহস করেনি বের হওয়ার। অবশেষে ১৭ ই জুলাই ভোর হওয়ার আগেই তারা হল ছেড়ে পালিয়ে যায়।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিজিবি সদস্যরা নিউমার্কেটের দিক থেকে অগ্রসর হলে আমরা সাইন্সল্যাব এলাকা ত্যাগ করি। সারাদিন রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে বাসায় ফিরি। ফেসবুক খুলতেই চোখে পড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য-দুহাত প্রসারিত এক তরুণ বুক পেতে দিয়েছে মুক্তির স্বপ্নে। আরো দেখি বীর চট্টগ্রামের সাহসী সন্তান ওয়াসিম আকরাম শহীদের তালিকায়! তাঁর ফেসবুক পোস্ট পড়ে মুহূর্তেই শরীরে আগুনের মতো রক্ত ধাবিত হতে থাকে। সে মুহূর্তে আমি আর বসে থাকতে পারিনি-আবার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। ১৭ তারিখের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি, সেদিন ছিল বুধবার।
১৭ ই জুলাই: আমরা শহীদ ভাইদের গায়েবানা জানাজার জন্য কফিন হাতে দাঁড়িয়েছিলাম-প্রতীকী প্রতিবাদ, কিন্তু এর বার্তা ছিল বজ্রের মতো! ঠিক সেই মুহূর্তে পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ল আমাদের ওপর। মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট আর বিকট শব্দের সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয় এক রণক্ষেত্রে। ছাত্রদের সাথে নিয়ে আমি কিছুক্ষণ প্রতিরোধ করি, তারপর আত্মরক্ষার্থে কেন্দ্রীয় শহীদমিনার হয়ে ঢাকা মেডিকেলে আশ্রয় নিই। আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও নিরাপদ ছিলাম না-পুলিশ সেখানেও ঢুকে পড়লে আমি বকশিবাজার হয়ে লালবাগের দিকে সরে যাই এবং রাতে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিই।
১৮ ই জুলাইঃ ১৮ জুলাই-এই দিনটি ছিল শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের জন্য এক দুঃস্বপ্নের দিন। ১৮ জুলাই দুপুরের দিকে ধানমণ্ডি ২৭ নাম্বার এলাকা থেকে মীনা বাজারের সামনে আবারও জড়ো হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। সেখানে আমি আমার ছোটভাই হাবিবুর রহমান হাবিব ছোররাগুলিতে আহত হয় পরে, আশরাফ, সোহানুর রহমান মিঠু সহ আরো কিছু ছোট ভাই সহ সেখানে প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করে কিছুটা আহত হই।
এরপর মেট্রোরেল সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায়ও (যদিও আমার বাসা দীর্ঘসময় ধরে ধানমণ্ডিতেই ছিলো) আমার একটা ভাড়া বাসা ছিল। ১৮ তারিখ সকালে ছাত্রজনতা রাস্তায় অবস্থান নিলে আমি তাদের সঙ্গে যোগ দিই। আমরা অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু তৎক্ষনাৎ পুলিশ চাইনিজ রাইফেল থেকে সরাসরি গুলি ছোড়ে আমাদের দিকে তাক করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমি ফোন করলাম আমাদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান ভাইকে। ভাই বললেন, "সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। পিছিয়ে আসার আর কোনো রাস্তা নেই। যেভাবে পারো, প্রতিরোধ গড়ে তোলো-রাজপথ ছাড়া যাবে না।"
আমান ভাইয়ের এই কথাগুলো যেন আমার হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিল। ঠিক তখনই আমার সামনে ১০-১১ বছরের এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। রক্তে ভিজে যাচ্ছিল পিচঢালা রাস্তা। আমরা তাকে রিকশায় করে হাসপাতালে পাঠালেও সে পথেই প্রাণ হারায়। বুকের মধ্যে শূন্যতা নেমে আসে, কিন্তু পিছু হটিনি।
আমি আবার সংগঠনের অন্য সিনিয়র ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করি। ইন্টারনেট অফ তারপর ফোন সাথে থাকাও বিপদজনক বিষয় হয়ে দাঁড়ায় লোকেশন ট্রাকিং আতংকে। তবুও কিছু মানুষের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দীন আহমেদ অসীম ভাই বললেন, "প্রতিহত করো, ধরে রাখো, নেতৃত্ব দাও।" এরপর "৩৬ জুলাই" নামের প্রবক্তা প্রিয় সামসুল আলম ভাইর সাথেও যোগাযোগ করি।
ইতিহাসের অজানা বাঁকে আমাদের এই আন্দোলনের ব্যতিক্রমী "৩৬ জুলাই" নামটি দিয়েছিলেন তিনি (তাকেই ৩৬ জুলাই বিপ্লবের প্রবক্তা বলা হয়) আমাদের প্রানপ্রিয় শামসুল আলম, সামসুল আলম ভাই। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত নানান কৌশলে উপায়ে আমাদের অনুপ্রেরণা দিতেন। আমাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে টর্চার সেলে নিয়ে টর্চার করে করে বারবার সামসুল আলম, কিভাবে এতো ইনফরমেশন পায়, কিভাবে এতো মাধ্যমে কানেক্টেড থাকে এইসব বিষয় আমাকে ডিবি কার্যালয়ে সবচেয়ে বেসি জিজ্ঞেস করেছে!
(৩৬ জুলাই বিপ্লবের সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দেয় তার লেখা বাস্তব উপস্থাপনগুলো।)
আমি সামনের দিকে এগিয়ে যাই। ফুটপাতের ভাসমান দোকানের টিন দিয়ে আত্মরক্ষার ঢাল বানাই, রাস্তার লোহার পাইপ ভেঙে লাঠি তৈরি করি। হাজারো জনতাকে একত্রিত করে সামনে দাঁড়িয়ে যাই। সেদিন আমিই ছিলাম মোহাম্মদপুর বসিলায় ছাত্রদল এবং বিএনপির একমাত্র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ছিলাম সম্ভবত (যা আমার নামে পুলিশ কর্তৃক মামলার রিমান্ড শুনানিতে উল্লেখ আছে) তাই নেতৃত্বের দায়িত্বটা বুক ভরে গ্রহণ করি। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। পুলিশের গুলিতে শতাধিক মানুষ আহত হয়, প্রাণ যায় অনেকের। আমি নিজেও সামান্য আহত হয়েছিলাম, আমার সাথে থাকা ছোটভাইদের অনেকের পরিস্থিতি আরো নাজুক।
সেদিন ঘরে ফিরে শুয়ে পড়ি পরের দিনের পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে ভাবতে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, জানি না। হঠাৎ রাত ৪:৩০-এ ঘুম ভেঙে যায়। নিচে মানুষের কণ্ঠস্বর, জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি-ডিবি পুলিশের পাঁচটি গাড়ি দাঁড়িয়ে, আমার বাসা ঘিরে রেখেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা দরজায় ধাক্কা দেয়। আমি না খুললে তারা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেই প্রথমে তাদের শর্টগান দিয়ে আমাকে বুকে ঠেকিয়ে মোটামুটি উত্তম-মাধ্যম দিয়ে এরপর রেডি করে নিচে নামায় আর বলে এটাই শেষ সময় তোর। এরপর চোখে কাপর বেঁধে একটি মাইক্রোতে তুলে অজানার উদ্দেশ্য পাড়ি জমালো। তখন দীর্ঘ দুই ঘন্টারও বেশি সময় হবে আমাকে বেড়িবাঁধের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাচ্ছে আর নানান বিষয় জিজ্ঞেস করতেছে। আর যতটা একটা মানুষ কে জীবিত রেখে ও মৃত্যু যন্ত্রণা দেওয়া যায় তাই দিয়েছে। তবুও চুপ ছিলাম।
একজন এসআই চিৎকার করে বলল, "তোরে খুইজা বাইর করতে অনেক কষ্ট হইছে। জ্বালাইয়া দিছোস দেশটা এবার বুঝবি মজা!"
এরপর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে ডিবি প্রধান হারুন নিজেই কিছু সময় আমাকে নিয়ে একজন ফুটবলারের ফুটবল খেলার মতো খেলে টর্চার করে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অন্যদের কাছে রেখে যায়। সেসময় আমার হাত-পা বেঁধে নিতম্ব ও পিঠে চলতে থাকে নির্যাতনের বীভৎসতা। ২১ শে জুলাই আমাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। অর্থাৎ ১৯ ও ২০ শে জুলাই আমাকে গুম করে রাখা হয়েছিল। ২৪ শে জুলাই বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় নিউজ হয় ডিবি পুলিশ কর্তৃক আমাকে আটকের সংবাদের।
আমান ভাই আগের দিন আমার বাসায় এসে নাকি পুরো পরিকল্পনা আমাকে দিয়ে গিয়েছিল কিভাবে এই মোহাম্মদপুর সহ অত্র এলাকাকে অচল করে দিতে হবে সেই পরিকল্পনা স্বীকার করতে বলা হয়েছিলো ইত্যাদি, ইত্যাদি। ফোনে যাদের যাদের সাথে কথা হয়েছে, সবার তথ্য চাওয়া হয়, কি কথা হয়েছে, কে কোথায় আছে এমন হাজার কথা। দিনে ৪-৫ বার করে জেরা, আর প্রতিবারই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে।
রিমান্ডের ৭ দিন ডিবি হেফাজতে থাকা অবস্থায় চোখ বেঁধে, হাত বেঁধে, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে লাথি মারা হয় আর আমান উল্লাহ আমান ভাই কে কল দিয়ে আনতে বলা হয়। সে কোথায় আছে এই বিষয় বারবার জিজ্ঞাসাবাদ আর নির্যাতন করে। এরপর অসীম ভাই এর দেওয়া কি নির্দেশনা ছিল কিন্তু ইতিমধ্যে তখনই সে দেশে এসে ডিবির দ্বারা আটক হয়। তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
নির্যাতনের সময় প্রতিবার যেন ফুটবলের মতো ফ্রি কিক দেওয়া হতো। কোমরে ৩০-৪০টি লাখির ঘা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। আমার কোমর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন, এখনো থেরাপি নিতে হচ্ছে। বারবার আমাকে টর্চার করে হাত ও পায়ের জয়েন্ট গুলি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়।
রিমান্ডের ৭ দিন ডিবি হেফাজতে থাকা অবস্থায় চোখ বেঁধে, হাত বেঁধে, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে লাথি মারা হয় আর আমান উল্লাহ আমান ভাই কে কল দিয়ে আনতে বলা হয়। সে কোথায় আছে এই বিষয় বারবার জিজ্ঞাসাবাদ আর নির্যাতন করে। এরপর অসীম ভাই এর দেওয়া কি নির্দেশনা ছিল কিন্তু ইতিমধ্যে তখনই সে দেশে এসে ডিবির দ্বারা আটক হয়। তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
নির্যাতনের সময় প্রতিবার যেন ফুটবলের মতো ফ্রি কিক দেওয়া হতো। কোমরে ৩০-৪০টি লাখির ঘা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। আমার কোমর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন, এখনো থেরাপি নিতে হচ্ছে। বারবার আমাকে টর্চার করে হাত ও পায়ের জয়েন্ট গুলি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়।
এরপর হঠাৎ করেই দেখি বাংলাদেশের জার্সি পরিহিত ১৬/১৭ বছরের একটা বাচ্চা ছেলেকে (যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যা মামলায় আটক) এনে আমাদের রুমে রেখে যায়। ওর মলিন মুখ দেখে আমার হৃদয় হাহাকার করে উঠে, ওর কাছে গেলাম কথা বললাম, ছেলেটা মাত্র ঢাকা কলেজ এ এইসএসসি তে ভর্তি হয়েছে। শুনে বুকটা হাহাকার করে উঠে এরপর ওরে নিজের কষ্ট ভুলে গিয়ে পরম যত্নে খাওয়া দাওয়া এরপর গোসল করানো, নিজের পায়ের উপর রেখে জোর করে ঘুম পারানো, যতটা সম্ভব ওরে স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করেছি যাতে করে ও ভয় পেয়ে না যায়। ও আমাদের কথিত মিডিয়ায় ভাইরাল নাম Hasnatul Islam Faiyaz মিডিয়াতে তখন ওর বেশ পরিচিতি।
পরবর্তীতে আমাকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। অবশ্য কেন্দ্রীয় কারাগারে আমার একমাত্র অদৃশ্য ছায়ার স্নেহ মমতাতে আমি অনেকটাই স্বস্তি অনুভব করেছি। সেখানে বন্দিজীবনের প্রতিটি দিন ছিল এক দুঃস্বপ্ন। অবশেষে, গণবিপ্লবে শেখ হাসিনার পতনের পর, ৬ আগস্ট রাতে আমি কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আবার চিরচেনা সেই রাজপথেই ফিরেছি।
লেখক: সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ
What's Your Reaction?






